গতবছর নেপালের নতুন মানচিত্র প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে ভারত-নেপাল সম্পর্কের আরো অবনতি দেখা দেয়। নেপালের নতুন মানচিত্রে লিম্পিয়াধুরা, লিপুলেক ও কালাপানি এই তিনটি স্থান নিজেদের মানচিত্রে উল্লেখ করে। যা গেল বছরের নভেম্বরে ভারতের প্রকাশিত নতুন মানচিত্রে বিদ্যমান। এরই মধ্যে ভারত কালাপানি এলাকায় নতুন রাস্তা তৈরির ঘোষণা দেয়। যেখানে ভারত বলে রাস্তাটি সম্পূর্ণ ভারতের সীমান্তে অপরদিকে নেপাল দাবি করে রাস্তাটির ১৭ কি.মি. নেপালের সীমান্তে আসে।
ইন্দো-চীন যুদ্ধ (১৯৬২) পর থেকেই কালাপানি জায়গাটি ভারতের নিয়ন্ত্রণাধীন। এখন প্রশ্ন হল কালাপানি অমীমাংসিত সীমান্ত কেন? আর এই নিয়ে ভারত-নেপালের বিরোধ কেন?
সুগৌলির চুক্তি
সুগৌলির চুক্তিটি ১৮১৬ সালের ৪ ঠা মার্চ নেপালের রাজদরবার ও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়। সুগৌলি নামে গ্রামে এই চুক্তিটি হয় বলে এটি সুগৌলির চুক্তি নামে প্রসিদ্ধ। একে ১৮১৬ এর চুক্তি ও বলা হয়। এবার একটু ইতিহাসের পাতা উলটানো যাক।
১৮১৩ সালে ব্রিটিশ ভারতের গভর্নর জেনারেল ছিলের লর্ড ফ্রান্সিস হেস্ট্রিংস। তিনি এসেই নেপালের ক্রমবর্ধমান রাজ্যের দিকে নজর দেন এবং তিনি রাজ্যের ভিতরে ঢুকতে চান। তিব্বতের সাথে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে তিনি নেপালের রাজদরবারের কাছে অনুমতি চায়। কিন্তু নেপালের রাজদরবার অনুমতি দেয় নি। তারপর ওউধ সীমান্ত ঝামেলা নিয়ে তরাই এ তাদের যুদ্ধ হয় যা এ্যাংলো-নেপালিজ যুদ্ধ নামে খ্যাত। যুদ্ধ টি দুই বছর পর্যন্ত স্থায়ী ছিল এবং ভালো অস্ত্রের কারণে ইংরেজরা জয়ী হয়। তারপর ইংরেজরা নেপাল কে একটি অসম চুক্তি স্বাক্ষর করতে বাধ্য করে।
প্রাচীন নেপালের পূর্ব সীমান্ত ছিল তিস্তা নদী থেকে শুরু আর পশ্চিম প্রান্ত কনগরা দূর্গ পর্যন্ত ( প্রায় ২,৬৭,৫৭৫ বর্গ কি.মি.) আর চুক্তির পর আয়তন হয় ১,৪৭,১৮১ বর্গ কি.মি অর্থাৎ চুক্তির ফলে নেপাল তার এক তৃতীয়াংশ ভূমি হারায়। শুধু তাই নয়, ভবিষ্যতে যাতে সমস্যা না হয় তাই নেপালের পূর্ব সীমান্ত মেছা নদী এবং পশ্চিম সীমান্ত সারদা বা মহাকালী নদী পর্যন্ত নির্ধারিত হয়।
তাহলে সমস্যা কোথায়
আপনারা যারা নদীর জন্ম সম্পর্কে জানেন, তারা বোঝেন যে সাধারণত কয়েকটি উপনদীর প্রবাহের কারণে মূল নদীটির জন্ম হয়ে থাকে।
মহাকালী নদী নেপালের পশ্চিম সীমান্ত নির্ধারণ করে। এর পশ্চিম প্রবাহ হচ্ছে লিম্পিয়াধুরা নদী, যা নেপাল দাবি করে এটি তাদের সীমান্ত। আর ভারত দাবি করে লিপুলেক এর ধারাটি (পূর্ব প্রবাহ) হচ্ছে সীমান্ত। অর্থাৎ দুই দেশ কালাপানিকে নিজেদের দাবি করে।
সুগৌলির চুক্তি তে শুধু মহাকালী নদীর কথাই উল্লেখ, যার ফাঁক ধরে দুই দেশের মধ্যে এই মানচিত্র যুদ্ধ।
আশা করি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের মাধ্যমে তাদের বৈরীতার অবসান ঘটবে। ঘরে থাকুন, সুস্থ থাকুন।