বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম সংগঠক ও সুপিরিচিত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী আর নেই। আজ ২০ জুন ২০২০ তারিখে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মহাখালীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। সকাল ১০টা ১০ মিনিটের দিকে তার লাইফ সাপোর্ট খুলে নেয়া হয়। তাঁর বয়স হয়েছিলো ৮৬ বছর।
দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত নানা রোগে তিনি ভুগছিলেন এবং ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থাতেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। কামাল লোহানী ফুসফুস ও কিডনির জটিলতা ছাড়াও হৃদ্রোগ ও ডায়াবেটিসের সমস্যাতেও ভুগছিলেন। শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
কামাল লোহানী মরণোত্তর অঙ্গদান করেছিলেন বলে জানা যায়। কিন্তু তিনি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন তাই তার অঙ্গদান করা হচ্ছে না। তাকে গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় সনতলা এলাকায় তাঁর স্ত্রীর কবরের পাশে দাফন করা হবে এবং এক্ষেত্রে অবশ্যই সরকারি নির্ধারিত স্বাস্থ্যবিধি মানা হবে।
কামাল লোহানী বাংলাদেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক। ১৯৩৪ সালের ২৬ জুন সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থানার সনতলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। কামাল লোহানী নামেই পরিচিত হলেও তার পারিবারিক নাম আবু নঈম মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল খান লোহানী। তার বাবার নাম আবু ইউসুফ মোহাম্মদ মুসা খান লোহানী এবং মা রোকেয়া খান লোহানী।
কামাল লোহানী প্রথমে কলকাতার শিশু বিদ্যাপীঠে পড়াশুনা শুরু করেন। দেশভাগের পর ১৯৪৮ সালে পাবনা চলে যান। ভর্তি হলেন পাবনা জিলা স্কুলে। ১৯৫২ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন। এরপর ভর্তি হন পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে। এই কলেজ থেকেই উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। আর উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পরই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ইতি টানেন তিনি।
কামাল লোহানী ‘দৈনিক আজাদ’, ‘দৈনিক সংবাদ’, ‘দৈনিক পূর্বদেশ’, ‘দৈনিক বার্তা’সহ বিভিন্ন পত্রিকায় কর্মরত ছিলেন। তিনি সাংবাদিক ইউনিয়নে দুদফায় যুগ্ম-সম্পাদক এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি হন। তিনি গণশিল্পী সংস্থার সভাপতি ছিলেন। ১৯৬২ সালে স্বল্পকাল কারাবাসের পর কামাল লোহানী ‘ছায়ানট’ সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সাড়ে চার বছর এই দায়িত্ব পালন করেন। এরপর মার্কসবাদী আদর্শে ১৯৬৭ সালে গড়ে তোলেন ‘ক্রান্তি’। তিনি বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী’র সভাপতি ছিলেন চার বছর (২০১২ ডিসেম্বর – ২০১৬ ডিসেম্বর)। বর্তমানে উদীচীর কেন্দ্রীয় কমিটির এক নাম্বার সদস্য।
কামাল লোহানী সাংবাদিকতায় ২০১৫ সালে একুশে পদক লাভ করেন।
কামাল লোহানীর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।