Aatoshi

বাতাসে পোড়া লাশের গন্ধ: মৃত্যুপুরিতে পরিণত হয়েছে ভারত

মহামারীতে আচ্ছন্ন পৃথিবী, পৃথিবীর আকাশ বাতাস।  দুনিয়াজুড়ে নিজের ভয়াল থাবায় করোনাভাইরাস আক্রান্ত করে রেখেছে কোটি কোটি মানুষকে। প্রতি মিনিটে এই রঙিন দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে ওপারে চলে যাচ্ছে শত শত মানুষ। প্রযুক্তির অত্যাধুনিকতা, বিজ্ঞানের সেরা সাফল্যের যুগেও আজ আমরা সবচেয়ে বেশি অসহায়।  আমেরিকা, ইউরোপ, জাপান তথা তথ্যপ্রযুক্তির শীর্ষে থাকা পরাশক্তিগুলোর কাছে নেই কোনো জবাব। পৃথিবীর মানুষ আজ পর্যদুস্ত। কোন উত্তর নেই চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ীদের কাছেও। প্রতিনিয়ত লাখ লাখ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, মৃত্যুর মিছিলে যোগ দিচ্ছে শত শত, হাজার হাজার।

আমরা জানিনা এর শেষ কোথায়, কবে, কিভাবে?
পাশের দেশ ভারত আজ পরিণত হয়েছে মৃত্যুপুরীতে। হাসপাতালগুলোতে নেই বেড, অসুস্থ মানুষ হাসপাতালের বাইরে ফুটপাতে শুয়ে রয়েছে। অক্সিজেনের ঘাটতি, কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না একটা অক্সিজেনের সিলিন্ডার। হাসপাতালে নেই রোগীর চিকিৎসা জায়গা, তার চেয়েও ভয়াবহ যেটি, সেটি হলো শ্মশানগুলোতে লাশের উপচে পড়া ভিড়। শ্মশানের গেটে মৃতদেহের লাইন, শেষকৃত্যের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে দুই দিন বা তারও বেশি সময়।

এই পরিস্থিতির কথা বছরখানেক আগেও কেউ কি ভেবেছিল? শ্মশানে মৃতদেহ শতকারের জন্য কাঠের অভাব পড়ে যাবে, লাশের লাইন তৈরি হবে একথা কেউ কি কল্পনা করেছিল?
হয়তো সামনে আরো ভয়ানক কিছু করতে যাচ্ছে যা আমাদের কল্পনার অতীত।
করোনাভাইরাস কে কিছুক্ষণের জন্য সরিয়ে রেখে, চলুন জেনে আসি বিশ্বজুড়ে আবির্ভূত অন্যান্য মহামারী গুলির অতীত ইতিহাস।

প্রত্নতত্ত্ববিদরা মনে করেন, খ্রিষ্টপূর্ব ৮৭০০-২০০০, প্রস্তর যুগের সময়কালে অর্থাৎ, এখন থেকে প্রায় ৫০০০ বছর আগে ‘প্লেগ ব্যাকটেরিয়া’ সংক্রমিত হয়ে মারা গিয়েছিল প্রচুর মানুষ। এই সময়ে মানুষের দাঁতের ‘ডিএনএ’ পরীক্ষা ও বিশ্নেষণ করে বিজ্ঞানীরা এই তথ্য পান।

ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, ১৬৫ খ্রিষ্টাব্দে ‘অ্যাটোনিন প্লেগ’ মহামারীতে মারা যায় প্রায় ৫০ লাখ মানুষ এর কয়েক শতাব্দি পর ৫৪১ খ্রিষ্টাব্দে ‘প্লেগ অব জাস্টিনিয়ান’ নামের ক্ষুদ্র সংক্রামক জীবাণু ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। ইতিহাসবিদদের মতে, মরনঘাতি এই মহামারিতে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল পাঁচ কোটির বেশি। যতটুকু জানা যায়, একপর্যায়ে এই রোগের প্রকোপ কমে আসে এবং যারা বেঁচে ছিল তাদের মধ্যে এই রোগের প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়েছিল। ১৮৯০-এর দশকে প্লেগের ভ্যাকসিন উদ্ভাবন হওয়ার ফলে এই রোগের প্রকোপ কমে আসে। জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাংক ইনস্টিটিউটের অণুজীব বিজ্ঞানী মারিয়া স্পাইরো মনে করেন, মহামারির বিষয়ে ঐতিহাসিক তথ্যপ্রমাণের অভাব রয়েছে। তবে ‘ডিএনএ’ সেই অভাবকে ব্যাপকভাবে পূরণ করতে পারে। ‘ডিএনএ’-এর মাধ্যমে মহামারির প্রকৃত সময়কাল নির্ণয় করা যেতে পারে।

১৩২০ খ্রিষ্টাব্দে ‘দ্য ব্ল্যাক ডেথ অব বুবোনিক’-এ ২০ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়। ওই সময়ে বিশ্বে মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশের মৃত্যুর জন্য দায়ী এই বুবোনিক প্লেগ। ১৩৪৭ খ্রিষ্টাব্দে এই রোগের দ্বিতীয় বৃহৎ প্রাদুর্ভাব এশিয়াতে শুরু হয়েছিল, যা পরবর্তীতে ইউরোপ ও চীনে বিস্তার লাভ করে। মূলত কালো ইঁদুর ও মাছি থেকে ছড়িয়েছিল এই রোগ।

১৪২০ সালে রোমে ছড়িয়ে পড়ে ‘দ্য এপিডেমিক অব ব্ল্যাক ডেথ’ অর্থাৎ, দ্বিতীয় প্লেগ প্রলয়। কয়েক মাসের মধ্যেই এটি নিশ্চিহ্ন করে দেয় জনপদের পর জনপদ। পরবর্তীতে এটি অন্য দেশেও ছড়িয়ে পড়ে। গবেষণায় দেখা যায়, এ সময় বিশ্বে মোট জনসংখ্যা ৪৫ কোটি থেকে ৩৭ কোটি ৫০ লাখে নেমে এসেছিল।

ঠিক ১০০ বছর পরে ১৫২০ সালে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের স্প্যানিশ বণিকরা নিয়ে আসে গুটি বসন্ত বা স্মল পক্স। ৯০ ভাগ আদিবাসী মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এই রোগ। প্রায় এক লাখ মানুষ মারা যায়। একই সময়ে মেক্সিকোসহ সারা বিশ্বব্যাপী গুটি বসন্ত, হাম ও প্লেগ মহামারি রূপে দেখা দেয়।

আবারও ঠিক ১০০ বছর পর ১৬২০ খ্রিষ্টাব্দে আরেক মহামারি দেখা দেয়, যার নাম ‘মে ফ্লাওয়ার’। ওই সময়ের অজানা রোগ স্মল পক্স, ইনফ্লুয়েঞ্জা, টাইফাসসহ ভাইরাস জ্বরে লন্ডন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়। এর ঠিক ১০ বছর পর ১৬২৯ থেকে ১৬৩১ সালে ইতালিতে প্লেগ রোগ ছড়িয়ে পড়ে। আড়াই লাখ মানুষ মারা যায় এই মহামারিতে।

১৬৬৫ সালে গ্রেট প্লেগ অব লন্ডন অস্ট্রেলিয়ার কয়েক লাখ মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়। এর পাশাপাশি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে ব্রিটিশ সৈনিকদের মাধ্যমে আফ্রিকা, ইন্দোনেশিয়া, চীন, জাপান, ইতালি, জার্মানি ও আমেরিকায় দেড়শ’ বছরের মধ্যে প্রায় দেড় কোটি মানুষ কলেরায় মারা যায়।

১৭২০ খ্রিষ্টাব্দে দ্য গ্রেট প্লেগ অব মার্শেই মানবজাতির ওপর হামলে পড়ে। শুধু ফ্রান্সেই মারা যায় ১০ লাখ মানুষ। ইতিহাসের তথ্যমতে, ষোড়শ-সপ্তদশ শতকে সারা পৃথিবীজুড়ে ২০ কোটি মানুষ শুধু প্লেগ রোগে মারা যায়। এটি ছিল বিশেষ এক প্রকার বিউবোনিক প্লেগ। একই সময়ে রাশিয়া ও পার্সিয়া ভয়ংকর মহামারির কবলে পড়ে। দুই লাখ মানুষ মারা যায়। বিশ্ব সে সময় কলেরা প্রতিরোধের জন্য কোনো প্রতিষেধক পায়নি।

১৮২০ সালে ভারতবর্ষে কলেরা মহামারী আকার ধারণ করে। কলেরায় লাখ লাখ মানুষ মারা যায়। পরবর্তীতে এই কলেরা বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এই শতকেই যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ায় ইয়েলো ফিভার মহামারিতে ৪৫ হাজার মানুষ মারা যায়। এই রোগে উচ্চ তাপমাত্রাসহ সারা দেহে প্রচণ্ড যন্ত্রণার সৃষ্টি হতো। যার কারণে মাত্রাতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে ভয়াবহ মৃত্যু ঘটত। এক প্রকার মশা ছিল এ রোগের জীবাণু পরিবাহী। ১৯২০ সাসে আসে ‘দ্য স্প্যানিশ ফ্ল'”। এক ধরনের ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সংক্রমণ সৃষ্টি হয় এই প্রাণঘাতী জ্বর। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণে রোগটি দ্রুত ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় ৫০ কোটির মতো মানুষ আক্রান্ত হয়েছিল। আর সারাবিশ্বে ১০ কোটিরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে এই ভাইরাসে।

এবার ২০২০ সালে আবির্ভাব হয় করোনাভাইরাসের যা কভিড-১৯ নামে পরিচিত। ইতিহাসে একই সঙ্গে বিশ্বের দুই শতাধিক দেশে মানবঘাতী ভাইরাস সংক্রমণের ঘটনা সম্ভবত এই প্রথম। চীনের উহান থেকে উৎপত্তি এই করোনাভাইরাস আজ সারাবিশ্বে ২১৬টিরও বেশি দেশে প্রায় দুই কোটি মানুষকে সংক্রমিত করেছে এবং প্রতিদিনই লাখ লাখ মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে।

অতীতে মহামারী থেকে বাঁচার জন্য টিকা বা ভ্যাকসিনের আবিস্কার সহজ ছিল না। এজন্য মানবজাতিকে অনেক বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল। ১৪০০ শতকে ভয়ংকর মহামারি ব্ল্যাক ডেথের সময় পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইন থাকার নিয়ম চালু হয়েছিল।

অনেক বিজ্ঞানী অক্লান্ত পরিশ্রম করে মহামারির টিকা বা প্রতিষেধক আবিস্কার করেছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে চিরস্মরণীয় এমন একজন বিজ্ঞানী ওয়াল্ডিমার হাভকিন। জন্মসূত্রে তিনি রাশিয়ান ইহুদি। অনেক গবেষণা কার্যক্রমের পরে তিনি ভ্যাকসিন তৈরি করতে সক্ষম হলেন। মানুষের দেহে এর কার্যকারিতা দেখতে গিয়ে অন্যের শরীরে প্রয়োগের ঝুঁকি না নিয়ে নিজের শরীরেই প্রয়োগ করলেন। বিস্ময়কর ফলাফল দেখলেন। এবার অন্য স্বেচ্ছাসেবকদের ক্ষেত্রেও একই ফলাফল দেখলেন। ১৮৯০ সালে পৃথিবী পেয়ে গেল অনেক আকাঙ্ক্ষিত কলেরার ভ্যাকসিন। লাখো কোটি মানুষ মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসলেন। পরবর্তীতে হাভকিন প্লেগেরও প্রতিষেধক আবিস্কারের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে গেছেন। এমনিভাবে ১৭৯৬ সালে গুটি বসন্তের টিকা আবিস্কার করলেন এডওয়ার্ড জেনার।

করোনা ভাইরাসের টিকা আবিষ্কার হয়েছে বলে দাবি জানানো হচ্ছে এবং সেটিকে গ্রহণ করছে লাখ লাখ মানুষ। তবে এই ভাইরাসের ধরন অন্যগুলোর মত না, প্রতিনিয়ত নিজের জিনকে পরিবর্তন করে চলেছে এই মৃত্যুঘাতি ভাইরাস।
যার কারণে সঠিক কোনো উত্তরে পৌঁছাতে পারছে না কোন বিজ্ঞানী।
ইতিহাস বলে, কোন মহামারী নাকি এত বড় সময়জুড়ে সারা পৃথিবীর তান্ডব চালায় নি এবং এত বৈচিত্র্যময় ভাইরাসের দেখাও বিজ্ঞানীরা এর আগে পাননি। যেন প্রতিনিয়তই এই কোভিড-১৯ নিজের রং পাল্টাচ্ছে, নিজেকে বদলে দিয়ে আরো শক্তিশালী হচ্ছে দিনের পর দিন।

বলা হচ্ছে ভারতের করোনাভাইরাস এর ভেরিয়েন্ট যদি বাংলাদেশে একবার প্রবেশ করে তবে মৃত্যুপুরীতে রূপ নিতে দেরি হবে না আমাদের প্রিয় বাংলাদেশের। সেজন্য সতর্কতামূলক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে সরকার, বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে ভারত বাংলাদেশের সীমান্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা। এতে করে যদি ভারতের ভেরিয়েন্ট কে দেশে ঢুকতে না দেয়া যায়।

এবার এসে আমাদের দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কথায়। গত ১৪ই এপ্রিল থেকে পুরো দেশে কঠোর লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে যা ২৮ই এপ্রিল পর্যন্ত কার্যকর থাকবে তবে আজ থেকে খুলে দেওয়া হয়েছে শপিংমলগুলো।
আর তাতেই দেখা যাচ্ছে মল গুলোতে উপচে পড়া ভিড়, যেন দীর্ঘদিনের কারাবাসের পর মুক্তি পেয়েছে জনতা। কারো মাঝে নেই বিন্দুমাত্র ভয়। ঈদের কেনাকাটাতে নেই কোন সচেতনতা।

একটু ভেবে দেখুন, এই ঈদে নতুন জামা পরাটা কি খুব জরুরী? যদি পরতেই হয়, তবে শপিংমলে প্রতিটি পরিবারে থেকে একজন যাক, সবার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম একজন গিয়ে কিনে নিয়ে আসুক। উৎসব করে সবাইকে কেন যেতে হবে?

চিন্তা করুন দেশ একবার ভারতের মতো অবস্থায় চলে গেলে কি হবে?

অক্সিজেন নেই, চিকিৎসা নেই,  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে শুধু মৃত্যুর খবর, ছবি, ফুটেজ। টুইটারে সবচেয়ে বেশি যেটা টুইট হয়েছে তা হলো #indianeedsoxygen.

একবার চিন্তা করুন, পরিস্থিতি একবার এরকম হয়ে গেলে কি করার থাকবে আমাদের?
নিজেকে বাচান, পরিবারকে বাঁচান।

এই রমজানে আল্লাহর কাছে দোয়া করুন, যেন আমরা এই পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার পেতে পারি। ইনশাআল্লাহ আমরা এ থেকে খুব শীঘ্রই মুক্তি পাব।

ঘরে থাকুন, নিরাপদ থাকুন, সুস্থ থাকুন।

Online Desk

Online Desk

Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments

Follow us

Don't be shy, get in touch. We love meeting interesting people and making new friends.

Most popular

Most discussed

BestFreeClassifiedAds™ WE DO CUSTOM WEB DESIGN Pirate Dev Keep Gadget USFreeClassifiedAds™ Elite Traders University | Take Your Trading to New Heights | 1 on 1 forex coaching | the forex trading coach pdf | private trading coach | free forex trading course | forex trading schools in usa | forex certification course online | forex coach near me | the forex trading coach free download
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x