অসাধারণ একটি বই। বইটির প্রেক্ষাপট স্বর্গছেঁড়া-জলপাইগুড়ি-কলকাতা।সমরেশ নিপুণ দক্ষতায় অনেকগুলো জায়গা জুড়ে, বিস্তৃত এক সময়ের গল্প বলে গেছেন।লেখাটা একটু অন্যধারার।লেখক তখনকার সময়ের রাজনীতি নিয়েও অনেক কথা বলেছেন।কুমোরের হাতে যেমন নরম একতাল কাদা জীবন্ত মূর্তি হয়ে ওঠে তেমনি দ্বিমুখী রাজনীতির আবর্তে ঘুরপাক খেতে খেতে বালক অনিমেষের কৈশোর পেরিয়ে যুবক হয়ে ওঠার গল্প উত্তরাধিকার।
সংক্ষেপ: স্বর্গছেঁড়া বাগান থেকে শুরু- চারদিকে শীত শীত আমেজ, সবুজে ঘেরা, যেখানেই যায় অনিমেষ, ছায়ার মত ঘেঁষে থাকে মায়ের আশীর্বাদ। মধ্যে জলপাইগুড়ি – শৈশবের সোনালি পর্দার ফাঁক গলে সেখানেই অনিমেষের বাস্তবতার প্রথম স্বাদ পাওয়া, গা শিউরে উঠা, এক কদম পিছিয়ে দুই কদম এগিয়ে যাওয়া। অবশেষে আছড়ে পড়া কলকাতায় – উত্তাল রাজপথে যেখানে আগামী দিনের জন্য সকলের অধীর অপেক্ষা।
চিরকাল পরিবারের যে মানুষগুলোর কাঁধে চড়ে অনিমেষ বড় হয়েছে, কালের পরিক্রমায় জীবনের বাঁকে বাঁকে তাদের নিজেদের মধ্যকার বাঁধন আলগা হয়েছে, ক্লান্তি এসে ভর করেছে তাদের প্রত্যেকের উপর। বুকে আগলে তিলতিল করে মানুষ করেছেন যারা অনিমেষকে, সময়ের সাথে তাদের পরিবর্তন খুব চোখে পড়ার মত – শেষকালে এসে বিষণ্ণ, জরাগ্রস্ত, অতীত জীবনের নেশায় বুঁদ।
ব্যাপারটি এতই হৃদয়বিদারক যে যতই চোখের সামনে প্রতিনিয়ত দেখি না কেন, মানুষ বদলে যাবার মত জীবনের এই অমোঘ সত্য সহজে মেনে নেওয়া যায় না; কাঁটার মতই গলায় বিঁধে থাকে। সকলে বদলে গেলে আমার বলে কি থাকে? সবকিছুর অবসানে, মানুষ ধরে রাখতে পারে কাকে? ওই অতীত জীবন?
রাজনীতি নিয়ে আলোচনা আছে বিশদ, যদিও অনিমেষের অনভিজ্ঞ চোখ দিয়েই দেখতে হবে সব। জন্মভূমির সে কী করে যোগ্য হবে? বুকের ভেতর ফুলে ফেঁপে উঠা যে দেশপ্রেম সেটি প্রমাণের শ্রেষ্ঠ উপায় কি? রাজনীতিবিদের বুলির সাথে নীতিনির্ধারকের কাজে এত অমিল কেন? অনিমেষ নিজেকে বারবার প্রশ্ন করেছে। যে দোলাচলের মধ্যে অনিমেষ নিজেকে আবিষ্কার করে সেটি অপরিচিত নয়, কারণ জীবনের কোন একপর্যায়ে অধিকাংশ লোকই এই পথ মাড়িয়ে এসেছেন। লেখকের ঝরঝরে লেখায় উঠে আসা অনিমেষের মানবিক গুণাবলির চর্চা, নিজের একটি পরিচয় গড়ে তুলবার প্রচেষ্টা, পায়ের নিচে মাটি খুঁজে পাবার যে এই লড়াই এসবই, অভিজ্ঞতার আলোকে, সত্যের খুব কাছাকাছি বলে মনে হল।
– সমালোচক
নীলা সেন
যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
সর্বোপরি বইটা চমৎকার।