আমাদের মতো সভ্যতা আরও অনেকগুলি রয়েছে এই মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সিতেই। যাদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ গড়ে তুলতে পারি। তারাও পারে। ভিনগ্রহীদের সেই সভ্যতাগুলির সংখ্যা কম করে ৩৬। সেই ভিনগ্রহীরা বেশ বুদ্ধিমান। সেই সব সভ্যতাও বেশ উন্নত। আর আমাদের পাঠানো সঙ্কেতের জবাব সেই ভিনগ্রহীদের কাছ থেকে পেতে গেলে মানবসভ্যতাকে আরও অন্তত ৬ হাজার ১২০ বছর টিঁকে থাকতে হবে।
এমনটাই দাবি করল জ্যোতির্বিজ্ঞানের সাম্প্রতিক একটি গবেষণা। যে গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘দ্য অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল’-এ।কিছুদিন আগেই, ২৮ শে এপ্রিল, আমাদের থেকে 30 হাজার আলোকবর্ষ দূরে একটি মৃত তারার কিছু আলোড়ন রেকর্ড করা গিয়েছিল। এটি এমন একটি উজ্জ্বল এবং উচ্চ-ফ্রিকোয়েন্সি রেডিও তরঙ্গ, যা পৃথিবী থেকেও স্পষ্ট ছিল। এটি গ্লোবাল এবং স্পেসের এক্স-রেতেও ধরা পড়েছে। কোনও নক্ষত্র থেকে শোনা এটি এই জাতীয় ধরণের প্রথম শব্দ। কিছু বিজ্ঞানী বিশ্বাস করেন যে এটি দ্রুত রেডিও ফাটানো (এফআরবি) সম্পর্কিত তথ্য সরবরাহ করবে। প্রসঙ্গত, এর আগে যে সংকেতগুলি পাওয়া গেছে, তারা অন্য একটি ছায়াপথ থেকে আসত, তবে আমাদের নিজস্ব গ্যালাক্সির তারা থেকেই এই নতুন সংকেত আসছে।
গত শতাব্দীর সাতের দশক থেকেই ভিনগ্রহীদের খোঁজ-তল্লাশ শুরু করেছে মানবসভ্যতা। কিন্তু এই প্রথম কোনও গবেষণা হিসাব দিল, এই ব্রহ্মাণ্ডে আমাদের ‘নাগালের মধ্যে’ ভিনগ্রহীদের অন্তত ক’টি সভ্যতা থাকতে পারে। যেগুলির সঙ্গে দূর ভবিষ্যতে যোগাযোগ গড়ে তোলা সম্ভব হতে পারে আমাদের। সেই ভিনগ্রহীরাও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে।
সহযোগী গবেষক ব্রিটেনের নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক ক্রিস্টোফার কনসেলিস বলেছেন, “ব্রহ্মাণ্ডে আমাদের ছাড়াও বুদ্ধিমান প্রাণীর উন্নত সভ্যতা আর ক’টি রয়েছে, যাদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ গড়ে তুলতে পারি, এই প্রথম তার একটা আন্দাজ পাওয়া গেল। যা আমাদের সভ্যতার কয়েক হাজার বছরের প্রশ্ন ছিল আর যে প্রশ্নের কোনও সদুত্তর এর আগে মেলেনি। এ জন্যই এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা।’’
১৯৬১ সালে জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফ্র্যাঙ্ক ড্রেক এই প্রশ্নের জবাব খোঁজার চেষ্টা করেছিলেন। দিয়েছিলেন বিখ্যাত সমীকরণ ‘ড্রেক ইক্যুয়েশন’। এই সমীকরণের সমাধানের জন্য সাতটি মাত্রা বেছে নিয়েছিলেন ড্রেক। তাদের মধ্যে অন্যতম কোনও গ্যালাক্সি বা ছায়াপথে বছরে গড়ে কতগুলি নতুন নক্ষত্র জন্মাচ্ছে, কোন সময়সীমার মধ্যে ভিনগ্রহীদের পাঠানো সঙ্কেত আমাদের কাছে এসে পৌঁছতে পারে।তবে ড্রেক ইক্যুয়েশনের সমস্যা ছিল, তার সমাধানের ফলাফলের ব্যাপকতা। অনিশ্চয়তা। ওই সমীকরণ অনুযায়ী, ভিনগ্রহীদের কোনও সভ্যতা যেমন না-ও থাকতে পারে, তেমনই অমন সভ্যতার সংখ্যা কয়েকশো কোটিও হতে পারে।“ফলে, ভিনগ্রহীদের সভ্যতা নিয়ে আমাদের কৌতূহল আরও বাড়িয়ে দেওয়া ছাড়া ড্রেক ইক্যুয়েশন দিয়ে আর তেমন কোনও সমস্যার জট খুলছিল না। তাই আমরা ওই সমীকরণটির পরিমার্জন, পরিবর্ধন করেছি’’, বলেছেন কনসেলিস।
আর সেটা করতে গিয়েই গবেষকরা দেখেছেন, এই মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সিতেই পৃথিবীর মতো অন্যান্য গ্রহে অস্তিত্ব রয়েছে বুদ্ধিমান প্রাণীর। তাদের সভ্যতা আমাদের মতোই উন্নত হতে পারে। এমনকী, আমাদের চেয়েও উন্নততর হতে পারে।বুদ্ধিমান প্রাণীর জন্ম ও বিকাশের প্রক্রিয়া যদি বিজ্ঞানসম্মত হয়, তা যদি আমাদের জানা বিজ্ঞানের নিয়মগুলি মেনে চলে, তাদের যদি অন্য কোনও নিয়মে আলটপকা উদ্ভব না হয়, তা হলে ভিনগ্রহীদের আরও অনেক সভ্যতা রয়েছে। সেই ভিনগ্রহীদের চেহারাও আমাদের ভয় পাইয়ে দেওয়ার মতো নয়। বরং পৃথিবীতে প্রাণের বিবর্তনের নিয়ম মেনে চললে তারাও অনেকটা আমাদেরই মতো দেখতে।
গবেষকদের দেওয়া হিসাব, এই সব নিয়ম মেনে চললে এই মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সিতেই এমন ৪টি থেকে ২১১টি সভ্যতা রয়েছে। যাদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ গড়ে তুলতে পারি। তারাও পারে। খুব কম হলেও সেই সংখ্যাটা ৩৬।আমাদের সবচেয়ে কাছে থাকা এমন সভ্যতাটি কী হতে পারে, তারও হিসাব দেওয়া হয়েছে গবেষণায়। বলা হয়েছে, “বুদ্ধিমান ভিনগ্রহীদের এমন উন্নত সভ্যতা আমাদের থেকে কম করে ১৭ হাজার আলোকবর্ষ (এক বছরে শূন্য স্থানে আলো যে পথ অতিক্রম করে) দূরেই রয়েছে।’’