গতকাল রাত আনুমানিক ১টার দিকে সীতাকুণ্ডের কাশেম জুটমিল সংলগ্ন বি এম কন্টেইনার ডিপোতে আগুন লাগে। সেখানে কেমিক্যাল ভর্তি কন্টেইনার বিস্ফোরণে আহত হয় আনুমানিক পাঁচ শতাধিক মানুষ, নিহতের সংখ্যা এখনো নির্দিষ্ট করে জানা যায় নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে তা একশত পেরিয়ে যেতে পারে।
এই খবর শোনা মাত্র চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সসহ সকলেই ধারণা করেন যে প্রচুর রক্তের প্রয়োজন হবে আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য। এক্ষেত্রে তারা চট্টগ্রামের সর্বোস্তরের মানুষকে আহবান জানান, যেন তারা রক্তদানে এগিয়ে আসেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বারবার জানানো হয় যেন রক্তযোদ্ধারা দ্রুত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে চলে যান।
চট্টগ্রামের বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এগিয়ে আসে চমেকে। নিজেদেরকে নিয়োজিত করে যে কোন ধরণের সহায়তায়। সাধারণ মানুষরা প্রয়োজনীয় ঔষধপত্র কিনে পৌছে দিতে থাকে আক্রান্তদের চিকিৎসায়। এগিয়ে আসে রক্তদানকারীরা, তবে এরপরও নেগেটিভ রক্তের সংকট দেখা দেয়।
রক্তের এই সংকটকালে এগিয়ে আসে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস ভর্তি করে রাত ২টার সময় চট্টগ্রাম মেডিকেলে উপস্থিত হয়। যেহেতু তারা আগেই জেনেছিল নেগেটিভ রক্তের প্রচুর সংকট, তাই শিক্ষার্থীদের মাঝে যাদের রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ, তারা বাস থেকে নেমে অতি দ্রুত চমেকে প্রবেশ করে। ক্ষণিকের মধ্যেই নেগেটিভ রক্তের ঘাটতি কিছুটা হ্রাস পায়। জানানো হয়, যাদের রক্তের গ্রুপ পজিটিভ তারা যেন কয়েক ঘন্টা অপেক্ষা করে, এবং পরবর্তিতে যদি আবারো রক্তের দরকার হয় তবে কর্তৃপক্ষ রক্তদানকারিদের সাথে যোগাযোগ করবে।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস নিয়ে বাকি শিক্ষার্থীরা চট্টগ্রাম পার্ক ভিউ হাসপাতালের দিকে রওনা হয়। সেখানে গিয়ে খোঁজ নেওয়া হয়, রক্তের প্রয়োজনীয়তা আছে কি না। আপাতত সেখানে প্রয়োজন নেই জানানো হলে, বাস এবার কম্বাইন্ড মেডিকেল হাসপাতাল (সি এম এইচ) চট্টগ্রাম সেনানিবাসের দিকে অগ্রসর হয়। সেনানিবাসে বাস প্রবেশের অনুমতি না দেওয়া হলেও, সেনাবাহিনীর গাড়িতে করে সিএমএইচে নিয়ে যাওয়া হয় কয়েকজন শিক্ষার্থীকে। তারা ফিরে এসে জানান, সেখানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে এবং পরবর্তিতে প্রয়োজন হলে তারা শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগ করবে।
যথারীতি, বাসটি আবারো চমেকে এসে উপস্থিত হয়, এবং শিক্ষার্থীরা চমেকে প্রবেশ করে যে যার মত করে সাহায্য সহযোগিতা করতে থাকে।
ভোরের আলো তখন ফুটবে, রক্তের ঘাটতি তখন মোটামুটিভাবে মিটে গেছে। রক্তদানকারি শিক্ষার্থীদেরকে নিয়ে বাসটি ধীরে ধীরে ফিরে গেল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে। এ যেন মানবতার এক দৃষ্টান্ত রচিত হলো চবির প্রশাসন, শিক্ষার্থী তথা চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষের হাত ধরে।
মাহবুব গাদ্দাফি
যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়