Aatoshi

তোমাকেই ভালোবাসি: শেষ পর্ব

সেদিন বড্ড খারাপ লেগেছিলো।আমার অবস্থাটা আগের মতই ছিলো শুধু মুখের হাসিটা ম্লান হয়ে গিয়েছিলো।খাওয়া-দাওয়া নেই,ঘুম নেই।একটা গোমড়া মুখ আর অবিরাম জেগে থাকা।কখনো ভাবিইনি প্রেমে পড়বো আর যখন পড়লাম তখন সেই দশা।সে কি আর মেনে নেওয়া যায়।মাস দুই বাড়িতেই গাট মেরে বসে রইলাম।নিজের প্রতি একটা অজানা রাগ কাজ করছিলো।শেষে ঠিক করলাম সে তার মত আমি আমার মত।ততদিনে চুল নেমে ঘাড় পর্যন্ত এসেছিলো দাড়ি-গোঁফ বেড়েছিলো কয়েকগুণ।সব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে বাইরে যাবার প্রস্তুতি।ইচ্ছা ছিলো প্রথমেই সেলুনে যাবো নিজের বেশে ফিরতে।সে অনুযায়ী তৈরি হয়ে যেই বাইরে বেরিয়েছি দেখলাম রাস্তার ওপাশে চায়ের দোকানে সে বসে আছে।রাগে মনে হচ্ছিলো শরীরের সমস্ত রক্ত মাথায় উঠে যাচ্ছিলো।পেছন ফিরে পা বাড়াতেই কেউ একজন বলে উঠেছিলো একটু দাড়ান না কিছু কথা ছিলো।ইচ্ছা ছিলো কোনো কথা নয় সোজা বাড়ির মধ্যে ঢুকে যাবো কিন্তু ঠাই দাড়িয়ে গেলাম।বলল রাশেদ ভাই আপনি কি কোনো কারণে আমার উপরে রেগে আছেন।মনের গভীর থেকে একটা নীরব চিৎকার ‘ভাই’।ইচ্ছে হচ্ছিলো বলি জী আপু তোমার উপর আমি ভিশন রেগে আছি আর তোমার সাথে কোনো কথাই বলতে চাইনা।কিন্তু পেছন ফিরে যখন বলব তখন শুধুই বলা হয়েছিলো নাতো হঠাৎ এমন প্রশ্ন করলে কেনো?

তার কথা তখন শুরু হলো।মানে আপনাকে অনেক দিন দেখেছিলাম না তাই কেমন যেন লাগছিলো।আপনাকে কিছুই বলতে পারবোনা তাই কাগজে লিখে এনেছিলাম তাও তালগোল পাকিয়ে ফেলেছি।কি লিখতে কি লিখেছি নিজেও জানিনা।আর তার পর থেকেই আপনাক আর কোথাও দেখিনি।সবখানে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম আপনি নাকি বাড়ি থেকে বের হননা।আমি জানি আপনি মেয়েদের খুব একটা পছন্দ করেন না।তাই প্রতিদিনই মনে হচ্ছিলো আমারই ভুল ছিলো।
ভাবছিলাম বলব আমি গিয়েছিলাম সেদিন তুমি আমার সামনে দিয়ে চলে গেলে তাই।কিন্তু নীরব রয়ে গেলাম।ওর সামনে গেলেই আমার কেনো যেন মুখে তালা লেগে যেতো।হাজার চেষ্টা করেও কিছু বলতে পারতাম না।
বলে উঠলো আমি ঠিক ধরেছিলাম।আমার জন্যেই সবটা হয়েছে।কি অবস্থা করে রেখেছে নিজের।কোনো যত্ন নেই কিছু নেই।আমিকি ইচ্ছে করে করেছি।ভালোবাসি তাই…
ওকথা বলে সে আর বিন্দুমাত্র সেখানে দাড়ায়নি।পেছন ফিরে এক দৌড়ে হাওয়া হয়ে গিয়েছিলো।আমি কোথায় দাড়িয়ে ছিলাম।আমার কি করা উচিৎ আর কি না কিছু ভেবে পাওয়ার শক্তি আমার ছিলোনা।সেদিন আর আমার কোথাও যাওয়া হয়নি।

অনেক ভালোলাগা খারাপ লাগা ছিলো সে সময়টাকে ঘিরে।ভাগ্য যেন সাথে ছিলোনা কখনোই।প্রথমে না জেনে দূরে ছিলাম আর তারপর জেনে।প্রতিদিন তাকে একবার দেখবো বলে ভার্সিটির আশেপাশেই থাকতাম।তার বিচরণ যেখানে ছিলো আমি ঠাই সেখানেই অপেক্ষায় বসে রইতাম।কিন্তু তার দেখাতো দূরের কথা কোনো খবর পর্যন্ত ছিলোনা।খালি একটা কথাই নিজেকে কুরেকুরে খাচ্ছে।যদি সেদিন একটু ভালোভাবে কথা বলতাম তাহলে আজকের গল্পটা ভিন্ন হত।সেদিনের পর তাকে দেখেছিলাম ঠিক পনেরো দিন চৌদ্দ ঘন্টা আটচল্লিশ মিনিট পর।ঘড়ি ঘন্টা ধরে বলছি কারণ প্রতিটা মুহূর্তে আমি তার অপেক্ষায় প্রহর গুনেছি।
তবে সেদিন সামনে যাকে পেয়েছিলাম সে সম্পূর্ণ ভিন্ন একজন।রোগা শুকনো আবার চোখের নিচে কালচে দাগ পড়েছে।এতদিন বাদে তাকে দেখে চিনতে খুব কষ্ট হচ্ছিলো।তার সাথে আরো একজন ছিলো।পরে খবর নিয়ে জানতে পারি তার মামা।এসেছিলো হোস্টেল থেকে তার সবকিছু ফেরত নিতে।আমি কিছুই করতে পারিনি।শুধু একটা কাগজে ফোন নাম্বারটা লিখে তার বান্ধবীর হাতে দিয়েছিলাম তার কাছে পৌঁছে দিতে।পেয়েছিলো আর আমি ফোনও পেয়েছিলাম।জানতে পারি আমার সাথে দেখা হবার পরের দিন তার মামা এসে তাকে বাড়ি নিয়ে যায়।বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর সে মামার কাছেই বড় হয়েছে।আর সেই অধিকারের জোরে সে সুদিপ্তার জন্য একজন সুদর্শন পাত্র দেখেছে এবং সেখানেই তার বিয়ে করা লাগবে।এসব শুনে আমার গলা ভারি হয়ে গিয়েছিলো।অস্পষ্ট কন্ঠে যখন বলেছিলাম মরে যাবো।সে কেদেছিলো খুব।শেষে বলেছিলো বড্ড দেরি হয়ে গেছে।সেদিন যদি একবার…
আমার পুরো দুনিয়া কোনো এক দমকা হাওয়ায় একটা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হলো।কথা বলা হয়নি আর।সপ্তা দুই পর তারই লেখা একটা চিঠি পেয়েছিলাম।

প্রিয় রাশেদ,
আশা করি ভালো আছো।আমি অনেক ভালো আছি যখন থেকে জানতে পেরেছি আমার ভালোবাসা মিথ্যে ছিলোনা।যদি জানতাম তুমি আমায় এত সহজে গ্রহন করে নেবে তবে দুটো বছর আমার অপেক্ষা করতে হতোনা।তোমায় খুব দেখছে ইচ্ছে করছে।কিন্তু তাতো আর সম্ভব নয় তাই চিঠি লিখছি।তুমি যখন চিঠিটা পড়বে তখন আমি দূর আকাশে তারাদের মাঝে বসে তোমায় দেখবো।একবার আকাশ পানে তাকিয়ে দেখো আমার তাতেই হয়ে যাবে।যতদিন জেনেছিলাম তুমি আমাকে ঘৃণা কর ততদিন আমার নিজের কষ্ট হলেও বিয়েটা করে নিতাম।মনের মধ্যে তোমায় যত্ন করে আগলে রাখতাম।কিন্তু তুমি কেনো বললে বাঁচবেনা?ভালোবাসি,ভালোবাসি অনেক ভালোবাসি।তাই বিয়েটা করতে পারলাম না।মামার মাথা নিচু করে তোমার হাত ধরে পালাতেও পারলাম না।একবার বলোনা ভালোবাসি।আমি কান পেতে আছি একবার শুনবো বলে।
আমি নেই তাই যেন উল্টোপাল্টা কিছু করে বসোনা।তাহলে জানবো আমাদের ভালোবাসা কখনই সত্যি ছিলোনা।সুন্দর একটা মেয়েকে বিয়ে ঘরে আনবে কেমন?মেয়ে হলে আমার নামটা তাকে দিয়ো।আমি থাকবো তোমার পাশে।সবশেষ ভালো থেকো আর নিজের যত্ন নিয়ো।

ইতি,
তোমার সুদিপ্তা।

চিঠিটা আমি রোজ পড়ি আর আকাশ পানে তাকাই।প্রতিবার মনে হয় যেনো সে আমার দেখছে।আর খুব যত্ন করে বলি ভালোবাসি।তার চলে যাওয়ার পনেরোটা বছর পেরিয়ে গেলো।বাবাও চলে গেছে সাত বছর।আমি বড্ড একা হয়ে গেছি।এই একাকিত্বই এখন আমার একমাত্র সঙ্গী।তবে মাঝে মাঝে সত্যিই মনে হয় ও আমার কাধে মাথা রেখে শুয়ে আছে।শুয়ে পড়লে মাথাটা আলতো করে বুকের ওপর রাখে।সে আছে আমার অস্তিত্বে আর থাকবে।

Online Desk

Online Desk

Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments

Follow us

Don't be shy, get in touch. We love meeting interesting people and making new friends.

Most popular

Most discussed

BestFreeClassifiedAds™ WE DO CUSTOM WEB DESIGN Pirate Dev Keep Gadget USFreeClassifiedAds™ Elite Traders University | Take Your Trading to New Heights | 1 on 1 forex coaching | the forex trading coach pdf | private trading coach | free forex trading course | forex trading schools in usa | forex certification course online | forex coach near me | the forex trading coach free download
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x