সুলেখা শহীদমিনারের সিঁড়িতে বসে আছে।চারিদকে ছুটন্ত পায়ের শব্দ। তবে এগুলো স্বাভাবিক পা নয়,যান্ত্রিক পা।ও পাশের রোডে ব্যাস্ত রমণিদের কোলাহল, এপাশের রোড থেকে দৃষ্টি সরে যায় দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ পাহাড়ে দিকে।বাঁদিকের একটা সাইনবোর্ড ও দৃষ্টি কেড়ে নেয় ‘জামাল নজরুল ইসলাম গণিত ও ভৌত বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র ‘।সামনের মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে ‘জয় বাংলা’ ভাস্কর্য।
সুলেখা অন্যান্য দিন, এরি কোন একটা নিয়ে পড়ে থাকে।কিন্তু আজ ওর কোন কিছুতেই মন নেই।আজকের পরিক্ষার খাতায় ও তেমন কিছু লেখে নি।সময় শেষ হলে সাদা খাতাই জমা দিয়ে এসেছে।
ও আনমনে তাকিয়ে আছে সিঁড়ির ধাপে পরে থাকা একটা বইয়ের পাতার দিকে।পাতাটা হাতে তুলে নিয়ে মনোযোগ দিল।নাহ, এতে তো নতুন কিছু লেখা নেই ;স্কুলে প্রতিদিন মুষ্টিবদ্ধ হাত সামনে বাগিয়ে যে শপথ পাঠ করতো ও ;তারি টুকরো একটা অংশ ওতে মুদ্রিত আছে।
ওর মনে পড়ে গেল, প্রতিদিন ওরা সমবেত স্বরে গাইতো ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’।ছোটবেলায় সুলেখা ভাবতো হয়তো আমাদের দেশে সোনা পাওয়া যায় অনেক; তাই এটাকে সোনার বাংলা বলা হয়।কিন্তু, এখন ও জানে এই সোনা ঔ অর্থে সোনা নয়, এটা রুপক অর্থে ব্যবহৃত।
সুলেখা আবারো আনমনে চারিদিকে তাকায়!ও হয়তো কিছু খুঁজছে ;কিন্তু ও কি খুঁজছে ঠাহর করে উঠতে পারে না।ওহ মনে পড়েছে ও খুঁজছে ‘সেই রুপক সোনার বাংলা’।যেখানে সড়কের বেহাল দশা থাকবে না,বিল্ডিং করার পর তাতে ফাটল দেখা দিবে না;বালিশ, পর্দা কিনতে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা লাগবে না।চাকরির জন্য সম্পত্তি বন্ধুকি রেখে সেলামি দিতে হবে না।স্টুডেন্টদের টিউশনি করে পেট চালাতে হবে না;অধিকার আদায়ের জন্য রক্ত ঝড়াতে হবে না।
দেখতে দেখতে সন্ধ্যা নেমে এসেছে,চারদিকে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে এসেছে, হাসিনা হলের চুড়াটা আর দৃষ্টি-গোচর হচ্ছে না।সুলেখা ও উঠেপড়ে।
লেখকঃ কথা