ঘড়িতে রাত তখন দেড়টা কি দু’টো বাজে। হঠাৎ বজ্রপাতে ঘুমের দুটো না তিনটে না একেবারে বারোটা বেজে গেলো। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে ঘরে বাতি জ্বলছে না। পাখাটাও ঘুরছেনা। তাই বাধ্য হয়েই উঠে গেলাম বারান্দায়। বাইরে এসে দেখলাম গেটের কাছে বাতি জ্বলছে। ভাবলাম ভুল দেখছি।চোখ মুছে ভালোমতো তাকাতেই দেখলাম একটা প্রাইভেট কার সাঁ করে বেরিয়ে গেলো। কিন্তু আমার জানামতে এ পাড়ায় কোনো লোক নেই যার গাড়ি আছে। ভাবলাম হয়ত আমার ভ্রম।সিগারেট ধরিয়ে ইজি চেয়ারটায় গা এলিয়ে দিয়ে বৃষ্টির শব্দে বিভোর হয়ে গেলাম। চোখ খুললো পাখির ডাকে। উঠে দেখি দিনের প্রথম হাসি সূয্যিমামা অনেক আগেই হেসেছেন। উঠে গিয়ে একেবারে গোসল সেরে বের হলাম। নিজের কফি নিজে বানিয়ে কালুর প্লেটে কিছুটা বিস্কুট দিয়ে রেডি হলাম। ওহ্ কালু আমার বাড়ির একমাত্র সদস্য অবশ্যই আমি বাদে। আমার পোষা কুকুর।বোধকরি গত এক মাসে বাড়ি থেকে বের হয়ে ওঠা হয়নি। কেনো জানিনা কিছুই ভালো লাগছিলো না কিছুই। সুজাতা না সুজানা সেই চক্র থেকে বের হতে পারছিলাম না। অনিয়মিত হওয়ায় চাকুরী খোয়াতে হয়েছে। সে এক যাচ্ছেতাই অবস্থা। প্রথম গন্তব্য আপাতত সেলুন। কালুর জন্য কিছু খাবার নেওয়া লাগবে। নিজের খাবার সেই গত কয়েকদিনের খবরের কাগজ। বাড়িতে যেহেতু টেলিভিশন নেই তাই খবরের কাগজেই চোখ বুলাই। গত এক মাসে তাও হয়নি। সব কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরছি গেটের সামনে একটা লাল রঙের প্রাইভেট কার। গাড়ি নম্বর গ-১১-১৮২০।কিছুক্ষণ ভাবতেই চমকে উঠলাম। এএএ..টা সুজানা জাফরের গাড়ি নম্বর না ! কিন্তু আমার বাড়ির সামনে কেন? তাহলে কি কালকে রাতে!!মাথাটা কেমন যেন গুলিয়ে যাচ্ছে। ঠিক তার ফাঁকে আমার পাশ দিয়ে গাড়িটা সাঁ করে বেরিয়ে গেলো। আমি কি করবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছিনা।
এমনিতেই সবকিছু বুঝে ওঠার শক্তি শেষ করে দিচ্ছিলো। তার মাঝে এক উড়োচিঠি। আজ সকালে ঠিক ইজি চেয়ারের ওপর, চিঠিটা নীল খামে ছিলো। ঝামেলার ভিতর দিয়ে যাচ্ছিলাম তাই খুলে দেখার ইচ্ছাও হয়নি। কিন্তু বিকেলে যখনই ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো মাথায় যেন সত্যিই বাজ পড়ার মত অবস্থা। সুজাতা সবসময় আমাকে নীল খামে চিঠি লিখে খামের কোণে একটা ত্রিভুজ এঁকে দিতো। অনেক জিজ্ঞেস করেও তার কারণ আমি কখনই জানতে পারিনি। দৌড়ে গিয়ে দেরাজ থেকে চিঠিটা বের করতেই হৃদযন্ত্রের স্পন্দন ক্রমেই বাড়তে লাগলো।একটা ছোট্ট ত্রিভুজ। হাত কাপতে শুরু করেছে। গলা শুকিয়ে কাঠ। চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। চিঠিটা খোলার সাহস আমি পাচ্ছিনা। দ্রুতগতিতে পাখা চলছে কিন্তু আমি ঘেমেই চলেছি। খুলে দেখার আকাঙ্খাও আছে আবার এক অজানা ভয়। সেদিনের সেই গাড়ি,সেই চেহারা শুধুই নাম সব কেমন যেন ক্রমেই বোধের বাইরে চলে যাচ্ছে। একটা ব্যাপার হঠাৎ করেই মাথায় খেললো। এমন উড়োচিঠি এলে রোজ জবাব নিতে সুজাতা স্কুল মাঠের দক্ষিন পাশে দাড়িয়ে থাকত।চিঠি হাত থেকে ফেলেই দৌড়াতে শুরু করলাম।নীল খামেই সেই একই ত্রিভুজ ওয়ালা উড়োচিঠি কোনো কাকতালীয় ঘটনা হতে পারেনা। মাঝপথে থেমে যেতে হলো।চিঠি আমি বাড়িতেই ফেলে এসেছি। চিঠিতে কি লেখা ছিলো আমি কিছুই জানিনা। যদি আমায় প্রশ্ন করে বসে?যদি চিঠির জবাব চায় কি দেব আমি?চিঠি কেন পড়লাম না! কেন আমি এখানে এলাম কিছুই বুঝে উঠতে পারছিনা। সাহেদ বলেছিলো সুজাতা নামের কেউ এই পৃথিবীতেই নেই। তবে কি কেউ খেলছে আমার সাথে? নাকি আমি সেই ভাবনার জগতে আঁটকে গেছি?
চলবে….
-শফিকুল বারী শিশির
ব্লগার, আতশি।