Aatoshi

ভাবনায় ভালোবাসি : শেষ পর্ব

একটা বছর কিভাবে পার হয়ে গেলো বুঝতেই পারলাম না। সময় কিভাবে পার হয়ে যায় বোঝার ক্ষমতা অবশ্য কারোই নেই। সুজাতার ব্যাপারটা জানার পর যখন অনেক ভেঙ্গে পড়ি সুজানা খুব ভালো বন্ধু হিসেবে পাশে দাড়ায়। ভালো সময় কাটতে থাকে। কিছু বই দিয়ে যায় পড়ার জন্য এখন বইয়ের প্রতি একটা অন্যরকম নেশা তৈরি হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে সুজানা আসে আড্ডা হয়। খারাপ লাগাটা যেন স্পর্শই করতে পারেনা আমায়।তবে রোজ বেলা করে সুর্যাস্ত দেখি। চাঁদের সাথেও দেখা হয় রোজ। এতদিন যেটা কখনো খেয়াল করিনি তা আজ আমাকে ধাক্কা মেরে অতীতের কোনো এক অন্ধকারে নিয়ে গিয়ে ফেলে দিয়েছে। সুজানার কপালের বাম পাশের কাটা দাগ। ঠিক সুজাতার কপালে যেই দাগটা আমি বহুবার দেখেছি। বছরখানি বাদে আবার কেন যেন সবকিছু একদম এলোমেলো মনে হচ্ছে। সবকিছু আবার নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। সুজাতা কখনো ই আমাকে সুজানার কথা বলেনি। একটি বারের জন্যেও না। যারা একে অপরের সবটা জানে।যারা একে অন্যের চিঠি লিখে দেয়। এমন কারো কথা কেন একটি বারের জন্যেও সে আমার কাছে উল্লেখ করল না? রাত পেরিয়ে সকাল হতেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লাম। ঠিক সেই আগের মতই।সকাল থেকে খুঁজতে খুঁজতে পাগল প্রায়। কিন্তু কোনো সূত্রই খুজে পেলাম না। শেষে ওদের বাসার দারোয়ান আমাকে রহস্য উদঘাটনের একটা সূত্র দিলো। জাফর ইকবালের পুরোনো কেয়ারটেকার। যিনি শুরু থেকেই জাফর ইকবাল সাহেবের বাড়িতে কাজ করত। তবে আজ আর সেখানে যাওয়াটা সম্ভব না। সন্ধে পেরিয়ে গেছে। আর জাগাটা এখানে বেশ খানিকটা দূরে। তাই এখন বাড়ি ফেরাটাই শ্রেয়। এখন শুধুই কাল সকালের অপেক্ষা। বাড়ি ফিরে দেখি সুজানা দরজার বাইরে বসে আছে। আমাকে দেখেই বলে উঠলো,”এতক্ষণ কোথায় ছিলে তুমি? আমি কতক্ষণ এখানে বসে অপেক্ষা করছি কোনো ধারণা আছে তোমার?” আমার অতি সহজ ভাষার উত্তর।বসে না থেকে চলে গেলেই তো পারতে।”এভাবে কেনো বললে? আমার অপেক্ষার কি কোনোই গুরুত্ব নেই তোমার কাছে?” তার এমন কথায় কেন যেন রাগ হলো আমার। উত্তরে না নেই বলতেই তার চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে শুরু করলো। আমি তাকে খুব শান্ত ভাবেই বললাম চলে যাও। আর যদি পারো এখানে কখনোই এসোনা। পড়ন্ত বিকেলে হারিয়ে যাওয়া নিজেকে আবিষ্কার করতে আর স্তব্ধ অন্ধকারে তারায় তারায় সেই মানুষটার হাসিমাখা মুখটা খুঁজতে ভালোই লাগে আমার।”আর আসবনা?” তার এই প্রশ্নের উত্তর আমার গোছানোই ছিলো। শুধু বলে দিলাম আমাদের গল্পে তুমি কোথাও ছিলেনা। আর ভাবনাতেও না।

সকালের অপেক্ষায় সারা রাত আর ঘুম হলোনা। সকালে সূর্যের প্রথম কিরণ দেখার সাথে সাথেই বেরিয়ে পড়লাম লোকমান চাচার উদ্দেশ্যে। হ্যা, সেই কেয়ারটেকার যাকে খুঁজে পাওয়াটা আমার জন্য খুব জরুরী। বহু পথ পেরিয়ে যখন লোকমান চাচার দেখা পেলাম তখন মানুষ কেবল আপন কাজে বের হচ্ছে। তার সাথে অনেক কথা হলো। বহু ইতিহাস অনেক গল্প। জানতে পারলাম সুজাতার মৃত্যুর পর নাকি তার চাকুরী চলে যায়। হ্যা, সুজাতা এবং সুজানা দু’টো আলাদা মানুষ। দু’টো আলাদা নাম। তাদের চিন্তা তাদের ভাবনা সবটাই আলাদা। উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে সুজানা চলে যায় বাইরে তার বাকি পড়া সারতে। সুজাতাও যেতে পারত কিন্তু বাবার ভালোবাসার টানে আটকা পড়ে যায়। ওদের তখন আট বছর যখন ওদের মা মারা যায়। আর বাবার প্রিয় ও সবচেয়ে কাছের মানুষ ছিলো সুজাতা। দিন যেতে লাগলো মাঝে ছুটিতে সুজানা ঘুরতে এসে একটি ছেলের ভালোবাসায় আবদ্ধ হয়। কিছু করা বা ভাবার আগেই জানতে পারে তার সাথে সুজাতার সম্পর্কের কথা। ক্যাম্পাস থেকে শুরু করে সবখানে আমাদের পিছু করে। সবটা জানে আমাদের সম্পর্কে। সুজাতা আর আমি কখনোই ফেলে আসা কাল নিয়ে কথা বলতাম না। এটা আমাদের ভালোবাসার প্রথম শর্ত ছিলো। যা সুজানা জানতে পারে সুজাতার ডায়েরি থেকে। যেদিন সুজাতা কোনো কারণে ক্যাম্পাসে আসতে পারতনা সেদিন আমার কাছে উড়োচিঠি আসত। দেখা হতো সুজানার সাথে।সত্যিটা জানতে আমি পাগল প্রায় হয়ে সেই ড্রাইভারের খোঁজে বেরিয়ে পড়ি।ড্রাইভার মোস্তাক এই ঘটনার সত্যতা প্রমাণ করে।আর আমাকে যা জানায় তাতে সত্যি মিথ্যে সবটা এক নিমিশে ঝাপসা হয়ে যায়। সুজাতার মৃত্যু তার বাবার কথাতে হয়নি। তার পেছনে ছিলো সম্পূর্ণ সুজানার মস্তিষ্ক। আমাকে নয় সুজাতাকেই। তার একমাত্র প্রতিযোগী।মায়ের চলে যাওয়ার পর বাবার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত এক মেয়ে যখন উষ্ণ ভালোবাসার খোঁজ করছিলো সেখানেও সুজাতার উপস্থিতি কখনোই মেনে নিতে পারেনি। ওর বলা বাকি গল্পটা সত্যি ছিলো।আমাকে সবটা জানাতেই সে আমার সামনে এসেছিলো। তবে সবটা শুধুই তার মত করে। সুজাতা আর সুজানার মধ্যকার পার্থক্য বুঝতে না পারা আমার ব্যার্থতা। আর তাতেই সুজাতা নামটা শুধুই একটা স্মৃতি হয়ে রয়ে গেছে।

সুজনা জাফরের নামে কেস ফাইল করা হয়।সে সবটা স্বীকার করে নেয়। শুনানিতে তার লাইফ ইন প্রিজারমেন্টের সাজা শোনানো হয়। জাফর ইকবাল সাহেব স্ট্রোক করেন আর চলাচলের শক্তি হারায়। সে তার সবটা হারায়। আজ আমি আর সে দু’জনে সুজাতার কবরটাকে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে সেখানে অপলক বসে আছি। এই ঘরটায় তার আগমনের আজ পাঁচ বছর।

 

-শফিকুল বারী শিশির
ব্লগার, আতশি

Online Desk

Online Desk

Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments

Follow us

Don't be shy, get in touch. We love meeting interesting people and making new friends.

Most popular

Most discussed

BestFreeClassifiedAds™ WE DO CUSTOM WEB DESIGN Pirate Dev Keep Gadget USFreeClassifiedAds™ Elite Traders University | Take Your Trading to New Heights | 1 on 1 forex coaching | the forex trading coach pdf | private trading coach | free forex trading course | forex trading schools in usa | forex certification course online | forex coach near me | the forex trading coach free download
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x