কালোজিরা ( ইংরেজি: Black Caraway, also known as Black Cumin, Nigella, Kalojeere and Kalonji)।
যে নামেই ডাকা হোক না কেন এই কালো বীজের গুণাগুণ স্বাস্থ্য উপকারিতা অপরিসীম, অসাধারণ, কালজয়ী। একটি মাঝারি আকৃতির মৌসুমী গাছ, একবার ফুল ও ফল হয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Nigella Sative Linn. এর স্ত্রী, পুরুষ দুই ধরনের ফুল হয়, রং সাধারণত নীলচে সাদা ( জাত বিশেষে হলুদাভ), পাঁচটি পাঁপড়ি বিশিষ্ট। তিন কোণা আকৃতির কালো রঙের বীজ হয়। গোলাকার ফল হয় এবং প্রতিটি ফলে ২০–২৫ টি বীজ থাকে। কালোজিরার আদিনিবাস দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়া। কেউ কেউ বলেন ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে এর উৎপত্তি স্থান। আয়ুর্বেদীয়, ইউনানী, কবিরাজি ও লোকজ চিকিৎসায় ব্যবহার হয়। ওষুধ শিল্প, কনফেকশনারি শিল্প ও রন্ধনশালায় নিত্যদিনের ব্যঞ্জরিত খাবার তৈরিতে কালোজিরার জুড়ি নেই। মশলা হিসেবে ব্যাপক ব্যবহার হয়ে থাকে। এটি পাঁচ ফোড়নের একটি উপাদান। এর বীজ থেকে পাওয়া যায় তেল।
ডায়াবেটিসকে মারাত্মক রোগ বলা হয়। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কালোজিরার ভূমিকা অপরিসীম। ডায়েটের জন্যও কালোজিরা ভালো কাজে দেয়। ত্বক সুন্দর ও দাগহীন করতে ব্যবহার করা হয় কালোজিরা। মাথা ব্যাথা দূর, জয়েন্টের ব্যাথা দূর, লিভার–কিডনি সুস্থ রাখতে কালোজিরা দারুণ কাজ করে৷ এছাড়াও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি, রক্তসঞ্চালন দ্রুত করতে কালোজিরা খাওয়া হয়৷ চুল পড়া রোধ করতেও কালোজিরার তেলের জুড়ি নেই।
ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা কালোজিরাকে একটি অব্যর্থ রোগ নিরাময়ের উপকরণ হিসেবে বিশ্বাস করে। হাদিসে আছে, কালোজিরা মৃত্যু ব্যতীত অন্য সব রোগ নিরাময় করে৷ আশ্চর্য বীজ কালোজিরার উপকারিতাও তাই বহুমুখী। তাইতো বর্তমানে মদিনার গবেষকরা দাবি করছেন, কালোজিরা ব্যবহারেই সেরে যাবে করোনা। সৌদি আরবের মদিনার তাইবাহ ইউনিভার্সিটির গবেষকরা দাবি করেছেন, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সফলভাবে চিকিৎসা করছেন তারা। এজন্য ব্যবহার করা হয়েছে কালোজিরা; যা হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর দেখানো চিকিৎসা পদ্ধতি।
ওই গবেষকদলের গবেষণাপত্র ছাপা হয়েছে মার্কিন জার্নাল ‘পাবলিক হেলথ রিসার্চ’-এ। যা চাইলে যে কেউই দেখতে পারবেন।
ওই গবেষকদলের চিকিৎসা পদ্ধতিতে বলা হয়, দুই গ্রাম কালোজিরা, এক গ্রাম চামেলি ফুল এবং এক চা চামচ মধু এক সঙ্গে মিশিয়ে করোনা থেকে সরে উঠা পর্যন্ত খেতে হবে। এই মিশ্রনটি খাওয়ার পর যে কোনো ফলের জুস কিংবা লেবু অথবা কমলা খাওয়ার জন্য রোগীদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
এই গবেষণা দলের প্রধান ডা. সালাহ মোহাম্মেদ এল সায়েদ বলেন, আল্লাহর অনুগ্রহে যারা এই চিকিৎসা নিয়েছেন তারাই সেরে উঠেছেন এবং তারা এটি নিজেদের বাড়িতেই তৈরি করেছেন। এই চিকিৎসা নেয়ার পর রোগীদের সেরে উঠতে এক সপ্তাহের বেশি সময় লাগেনি।
গবেষণাপত্রে উল্লেখ রয়েছে, কালোজিরা ব্যবহারের ফলে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। টিস্যু সুরক্ষিত থাকে, ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্থ হয় না । এছাড়া মধুও ভাইরাস সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। পাশপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়। পাশাপাশি চামেলি ফুলের নির্যাস শরীরের তাপমাত্রা কমাতে জাদুকরি কাজ করে।
কালোজিরাতে আছে ফসফেট, লৌহ ও ফসফরাস, আরও রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধক কেরটিন, বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান এবং অম্ল রোগের প্রতিষেধক। তাই বিশেষজ্ঞরাও বর্তমানে কালোজিরা খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন৷